মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০২:২৮ পূর্বাহ্ন

শীতে শিশুর ত্বকজনিত রোগ ও চিকিৎসা

শীতে শিশুর ত্বকজনিত রোগ ও চিকিৎসা

ডাক্তার জাহেদ পারভেজ বড়ভুঁইয়া

শীতকালে সব বয়সের মানুষ বা পশু-পাখিদের নানা চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। তবে কোমলমতি শিশুদের চামড়া বা ত্বক বেশি আক্রান্ত হয়। মূলত আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই তাদের ত্বকের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। আবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে জীবাণুরাও সহজেই আক্রান্ত করতে পারে। শিশু নিজে তার সমস্যা বলতে পারে না বলেও অনেক সময় রোগটি জটিল পর্যায়ে গিয়ে নির্ণিত হয়।

শীতকালে শিশুর ত্বকে অনেক ধরনের সমস্যা হলেও মূলত এটপিক ডার্মাটাইটিস বা অ্যাকজিমা, ইকথায়সিস, ঠোঁট ফাটা, হাত-পা ফাটা, ডাস্ট অ্যালার্জি, মুখে ঘা ইত্যাদি সমস্যা বেশি দেখা যায়।

এটপিক ডার্মাটাইসিস বা অ্যাকজিমা :

এই রোগটি শিশুদের ক্ষেত্রে শীতকালে খুব বেশি দেখা যায়। এটা মূলত বংশগত কারণের সঙ্গে পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের কারণগুলো যুক্ত হয়ে রোগটি তৈরি হয়।

শিশুদের মুখে, হাত-পায়ে ও ধড়ে বা বডি ট্রাঙ্কে এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। প্রথমে চামড়া লাল খসখসে হয়। সেখান থেকে তরল নিঃসরিত হয়। কখনও কখনও সামান্য চুলকানি থাকে। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার প্রচ- চুলকানি হতে পারে। কখনও কখনও ইনফেকশন হওয়ার কারণে পুঁজ ও ঘা হতে পারে।

চিকিৎসা

প্রথমত অ্যান্টি হিস্টামিন সিরাপ এক চামচ করে দুবার এক সপ্তাহ থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত খেতে পারে। বয়সভেদে ট্যাবলেটও দেওয়া যেতে পারে। ইনফেকশন হলে কখনও কখনও অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল ও মুখে খাওয়ানো ট্যাবলেট বয়স ও ওজন অনুযায়ী খাওয়ানো যেতে পারে। তবে শিশুর বয়স, ওজন ও স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে অবশ্যই চিকিৎসক দেখিয়ে এ ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত। আপাতত ক্ষতস্থানে স্থানীয়ভাবে শ্যাম্পু, পটাশিয়াম-পারম্যাঙ্গানেট সলিউশন দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে। হাইড্রোকর্টিশন ও জেনটামাইসিন ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

ইকথায়সিস

এ রোগে এক ধরনের মাছের আঁশের মতো স্কেল তৈরি হয় চামড়ায়। এটিও এক ধরনের বংশগত রোগ, যা শীতকালে বৃদ্ধি পায়।

চিকিৎসা

এর জন্য ইমোলিয়েন্ট ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারণত নারিকেল তেল, সরিষার তেল অথবা অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যায়। স্থানীয়ভাবে বা লোকালি স্টেরয়েড জাতীয় মলম ব্যবহার করা যায়। খাওয়ার ওষুধ হিসেবে ভিটামিন ‘এ’ দেওয়া যেতে পারে।

ঠোঁট ফাটা

ছোট-বড় সবারই শীতকালে ঠোঁট ফাটার প্রবণতা বেড়ে যায়। ঠোঁট ফেটে গিয়ে কখনও কখনও রক্তের মতো বের হতে পারে। শিশুর ক্ষেত্রে ঠোঁট ফাটার জন্য ব্যথা হতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় শিশুরা খেতে পারে না। বিশেষ করে ঝাল জাতীয় খাবার। শিশুদের ঠোঁট ফাটার জন্য লিপজেল, ভ্যাসলিন বা অন্য কোনো প্রটেকটিভ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। যাদের ঠোঁট ফাটার প্রবণতা বেশি তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সকাল, দুপুর ও রাতে এ ধরনের ক্রিম ঠোঁটে দেওয়া উচিত।

হাত-পা ফাটা

পায়ের গোড়ালি ও হাতের তালু ফাটা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ইমুলিয়ান ব্যবহার করা যেতে পারে। পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ ইউরিয়া ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। সেলি সাইলিক এসিড ১ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে।

মুখে ঘা

শীতকালে মুখে ঘায়ের প্রবণতা একটু বেশি দেখা দেয়। মুখে ঘা হলে তার চিকিৎসা দ্রুত করা উচিত। তাহলে কার্যকর ফল পাওয়া যায় এবং শিশু তাড়াতাড়ি সেরে ওঠে। নবজাতককে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় দুবার ভেজা কাপড় বা তুলা দিয়ে জিহ্বা পরিষ্কার করে দিতে হবে। সঙ্গে ১ শতাংশ জেনশিয়ান ভায়োলেট পাঁচ থেকে সাত দিন লাগালে ঘা ভালো হয়ে যায়। এই ওষুধ একটু গিলে ফেললে শিশুর কোনো ক্ষতি হয় না। প্রয়োজনে অ্যান্টি ফাঙ্গাল, ভিটামিন, অ্যান্টিবায়োটিক বয়স ও ওজন বিবেচনা করে দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তার দেখিয়ে নিতে হবে।

ডাস্ট অ্যালার্জি

শীতকালে অ্যালার্জির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ আবহাওয়া শুষ্ক থাকার কারণে ধুলাবালি, ছত্রাক ও বিভিন্ন উদ্ভিদের পুষ্পরেণু বাতাসে বেশি পরিমাণে থাকে। এতে করে শিশুরা খুব সহজেই অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হতে পারে। আবার অনেক শিশু বিশেষ কোনো খাবারের কারণেও আক্রান্ত হতে পারে। খাদ্যজনিত অ্যালার্জির জন্য খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিন। যেসব খাবারে অ্যালার্জির সমস্যা, তা এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে অ্যান্টিহিস্টামিন সিরাপ বা ট্যাবলেট দেওয়া যেতে পারে।

সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। ঘর ধুলাবালিমুক্ত রাখুন। শিশুদের ত্বক অনেক সেনসেটিভ, তাই সেদিকে লক্ষ রাখুন। শিশুর পোশাক পরিষ্কার রাখুন।

মায়েদের বা পরিবারের ভূমিকা : এসব রোগ থেকে বাবা-মায়ের ভূমিকা অপরসীম। বিশেষ করে এ সময়টাতে শিশুদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। শিশুদের ঠান্ডা যাতে না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শিশুদের বাইরে নেওয়া যাবে না, প্রয়োজনে বাইর হলে শীত প্রতিরোধক কাপড় পরিয়ে নিতে হবে। এছাড়া পরিবারে কারও প্রচ- ঠান্ডা লাগলে তাদের কাছ থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে। সর্বোপরি বাবা-মাদের  বিশেষ দায়িত্বশীল হতে হবে।

ডাক্তার জাহেদ পারভেজ বড়ভুঁইয়া

কনসালট্যান্ট ডার্মাটোলজিস্ট শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877